জয় বাবা লোকনাথ ব্রম্মচারী
জীবনীঃ
১৭৩০ খ্রীস্টাব্দে পশ্চিমবাংলার চৌরাশি চাকলা নামক গ্রামে; জন্মগ্রহণ করেন লোকনাথ ঘোষাল। বাবা লোকনাথ শ্রীকৃষ্ণের জন্মদিন জন্মাষ্টমীতে; ১৭৩০ খ্রিস্টাব্দের ৩১ আগস্ট (১৮ ভাদ্র, ১১৩৭ বঙ্গাব্দ) কলকাতা থেকে কিছু দূরে; উত্তর ২৪ পরগণার চৌরাশি চাকলা গ্রামে একটি ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম রামনারায়ণ ঘোষাল এবং মাতা কমলাদেবী। তিনি ছিলেন তাঁর বাবা-মায়ের ৪র্থ পুত্র।
লোকনাথের
জন্মস্থান নিয়ে; শিষ্যদেরও ভেতরে বিতর্ক আছে। নিত্যগোপাল সাহা এ বিষয়ে হাইকোর্টে
মামলা করেন ও আদালতের রায় অনুযায়ী; তার জন্মস্থান কচুয়া বলে চিহ্নিত হয়। যদিও অনেকে
মনে করেন তার জন্মস্থান; বর্তমান উত্তর ২৪ পরগণার চৌরাশি চাকলা গ্রামে; যা এখন চাকলাধাম
নামে লোকনাথ ভক্তদের নিকট পরিচিত।
পার্শ্ববর্তী
গ্রাম (কাঁকড়া) কচুয়া গ্রামে বাস করতেন; ভগবান গাঙ্গুলী নামে ভারতবর্ষের নামকরা এক
পন্ডিত। এগার বছর বয়সেই গুরু ভগবান গাঙ্গুলীর কাছে; একমাত্র বন্ধু বেনীমাধব সহ সন্ন্যাস
গ্রহণ এবং তারপর গৃহত্যাগ করেন লোকনাথ।
হিমালয়ের
পাদদেশে ভিন্ন ভিন্ন গুহায়; জঙ্গলে কঠিন সাধনায় অতিবাহিত করেন প্রায় ৪০ বছর। গুরুদেবের
আদেশ ও নির্দেশ এক বাক্যে পালন করেন লোকনাথ ও বেণীমাধব; দুই ব্রহ্মচারী বন্ধু। হিমালয়ে
থাকাকালীন প্রচন্ড ঠান্ডা উপেক্ষা করে; কঠিনতম তপস্যার মাধ্যমে লাভ করেন পরম সত্য।
কিন্তু
নিজের প্রচারবিমুখতার কারনে সেই কষ্টের কথা; কাউকে কিছু বলে যাননি। শুধু বলতেন-“মনে
হয় এই বিরাট বিশ্বসৃষ্টির মধ্যে আমি ওতপ্রোত হয়ে রয়েছি; আমার মধ্যেই বিরাজ করছে
সমগ্র সৃষ্টি, আর সমগ্র সৃষ্টির আদি ও অন্তে আমিই শ্বাশত হয়ে রয়েছি”। তিনি বলতেন;
“সমাধিস্থ অবস্থায় অবস্থানকালে কত বরফ এই শরীরের উপর জমেছে; আবার গলে বরফ হয়ে গেছে;
তার খেয়াল করার মতন শরীর-মনের চেতনা তখন আমার কোথায়”।
বাবা
লোকনাথ ও বেনীমাধবের বয়স যখন ৯০ তখন গুরুর বয়স ১৫০। গুরু ভগবান গাঙ্গুলীর দেহত্যাগের
সময় চলে আসায়; তিনি তার দুই শিষ্যকে নিয়ে আসেন; ভারতের শ্রেষ্ট মহাযোগী তৈলঙ্গ স্বামীর
কাছে। তারপর দেহত্যাগ করেন ভগবান গাঙ্গুলী।
লোকনাথ
ও বেণীমাধব প্রায় ২০ বছর কাটান; তৈলঙ্গ স্বামীর সঙ্গে তাঁর আশ্রমে। পৃথিবীর অনেক দেশ
ভ্রমণ করে বেরান পায়ে হেঁটে। তৈলঙ্গ স্বামীর নির্দেশে – বেনীমাধবকে সঙ্গে নিয়ে বাবা
লোকনাথ চলে যান তিব্বত। তিব্বত থেকে অরুনাচল; অরুনাচল থেকে আসাম। আসামেই থেকে যায়
বেনীমাধব। এখানেই ১৪০ বছরের বন্ধুত্বের চিরবিদায় হয়। লোকনাথ বাবা চলে আসেন চন্দ্রনাথ
পাহাড় (সীতাকুন্ডু), চট্টগ্রামে।
বাবা
লোকনাথকে নিয়ে আছে অনেক গল্প। ধর্মপ্রচারক বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামী চন্দ্রনাথ পাহাড়ে গাছের
নীচে ধ্যানমগ্ন ছিলেন; হঠাৎ চোখ খুলে দেখেন চারিদিকের আগুনের লেলিহান শিখা; প্রচন্ড
ধোঁয়ায় নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। অজ্ঞান হবার মুহুর্তে দেখতে পান; এক দীর্ঘদেহী উলঙ্গ
মানুষ তাকে কোলে তুলে নিচ্ছেন। যখন জ্ঞান ফিরে পান দেখেন; আসে-পাশে কোন জনমানব নেই
। তিনি একা পাহাড়ের নিচে শুয়ে আছেন।
পরবর্তীকালে
বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামী নামি ধর্মপ্রচারক হিসাবে পরিচিতি লাভ করেন। ভারত এবং বাংলাদেশে
তার অসংখ্য ভক্ত ছিল। তিনি যখন নারায়নগঞ্জ এর বারদী আসেন; তখন বাবা লোকনাথকে দেখে
চিনতে পারেন। বুঝতে পারেন, ইনিই তার জীবন বাঁচিয়েছিলেন।
এরপর
সারা ভারত এবং বাংলাদেশে প্রচারবিমুখ বাবা লোকনাথের অসামান্য যোগশক্তির কথা; প্রচার
করে বেড়ান এই বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামী। তখন থেকেই মানুষ বাবা লোকনাথ সম্পর্কে জানতে পারেন।
লোকনাথ
বাবার বারদী আসা নিয়েও আছে গল্প। সীতাকুন্ডু থেকে বাবা লোকনাথ চলে আসেন দাউদকান্দি।
এখানেই পরিচয় হয় বারদী নিবাসী- ডেঙ্গু কর্মকারের সাথে। তিনি জোর করা বাবাকে নিয়ে
আসেন বারদী।
বাবা
লোকনাথ বলেছিলেন, “ডেঙ্গু তুই আমাকে নিয়ে যেতে চাইছিস, আমি তোর সাথে যেতে প্রস্তুত,
কিন্তু এই লেংটা পাগলাকে তুই কিভাবে ঘরে রাখবি। লোকে তোকে ছি ছি করবে। সহ্য করতে পারবি।
ভেবে দেখ ?”। ডেঙ্গু উত্তরে বলেছিলেন; “আমি কিছু বুঝি না, আপনাকে আমার সাথে যেতে হবে।
লোকে যা বলে বলুক। শুধু আপনি কথা দেন – বারদী ছেড়ে কোথাও যাবেন না”।
ডেঙ্গুর
সাথে বাবা লোকনাথ চলে আসেন বারদী। ছোট ছোট ছেলেরা বাবাকে পাগল ভেবে; পাথর মারতে থাকে।
ডেঙ্গুর পরিবারে বাবাকে নিয়ে শুরু হয় অশান্তি। বারদীর ধনী জমিদার নাগ-পরিবার; তারা
বাবাকে তাদের বাড়িতে নিয়ে আসার চেষ্টা করেন। কিন্তু বাবা থাকার জায়গা বেছে নেন;
ছাওয়াল বাঘিনীর নদীর পাড়ের শ্মশানভূমি।
ঘন জঙ্গলে
ঘেরা এই শ্মশানভূমি। দিনের বেলায় গ্রামের মানুষ যেতে ভয় পেত। এইখানেই বাবা নিজ হাতে
নিজের জন্য তৈরি করেন কুটির। যা আজ সারা বিশ্বের বাবা লোকনাথ ভক্তদের কাছে; এক মহান
তীর্থভূমি। লক্ষ লক্ষ মানুষের সমাগম হয় এই পূণ্যভূমিতে। কেঁদে, মাটিতে গড়াগড়ি খেতে
খেতে; অসংখ্য মানুষ নিজেদের দুঃখের কথা জানায় বাবা লোকনাথের কাছে।
বাবা
বলতেন -“ওরা বড় দুঃখী, ওরা বড় অসহায়। ছোট ছোট ওদের চাওয়া গুলো পূরণ করে দেওয়ার
কেউ নেই; তাই তো ওরা আমার আছে ছুটে আসে; ওদের দুঃখের কথা; কষ্টের কথা আমাকে বলতে। ওদের
দুঃখের কথা আমি শুনি বলেই; আমার কাছে ওদের যত আবদার, অধিকার। সংসারের কঠিন পথ চলতে
চলতে ওরা ক্ষতবিক্ষত; ওদের বিশ্বাস আমিই ওদের দুঃখ দূর করে দিতে পারি”।
বাবার
শিষ্যদের নিয়েও আছে অনেক গল্প। ফরিদপুর জেলার পালং থানার মহিসা গ্রামে রজনীকান্ত চক্রবর্তীর
জন্ম। ঢাকা ওয়ারীতে তিনি ব্রহ্মচারী যোগাশ্রম প্রতিষ্টা করেন। পরে তা ফরিদাবাদে স্থানান্তর
করেন। তিনি বাবা লোকনাথের স্মরণে আসেন; ১৮৮৬ থেকে ১৮৯০ সালের দিকে। বাবার একজন যোগ্য
শিষ্য হিসাবে পরিচিতি লাভ করেন।
বারদীর
আশ্রমের কাছেই এক বৃদ্ধা, নাম-কমলা। সম্বল বলতে এক গরু ছাড়া কিছুই ছিল না। দুধ বিক্রি
করে দিন চালাতেন। লোকমুখে বাবা লোকনাথের প্রশংসা শুনে; এক বাটি দুধ নিয়ে বাবাকে দেখার
জন্য চলে আসেন। বাবা লোকনাথ তাঁকে মা বলে ডাকে কাছে টেনে নেন। লোকনাথ বাবা তাঁকে “মা”
ডাকতেন বলে; পরবর্তীতে তিনি ‘গোয়ালিনী মা’ নামে পরিচিতি লাভ করেন। শেষ জীবন পর্যন্ত
তিনি লোকনাথ বাবার আশ্রমেই কাটান।
ব্রহ্মানন্দ
ভারতী ঢাকার বিক্রমপুরের পশ্চিমপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পারিবারিক নাম – তারাকান্ত
গাঙ্গুলী। আইন পেশায় ও শিক্ষকতায় জড়িত ছিলেন। লোকমুখে বাবা লোকনাথের কথা শুনে; কৌতুহলবশতঃ
দেখতে আসেন। পরে সমস্ত বিষয়-সম্পত্তি দান করে; বাবার আশ্রমে চলে আসেন। বাবা নতুন নামকরণ
করেন-ব্রহ্মানন্দ ভারতী। তাঁর হাতেই প্রথম রচিত হয়- লোকনাথের জীবন কাহিনী ও দর্শন।
পরবর্তীতে
কুলদানন্দ ব্রহ্মচারী নামে এক বিজয়কৃষ্ণের শিষ্যের লিখিত ” সদগুরু সঙ্গ” প্রামান্য
সাধনগ্রন্থ রূপে সমাদৃত হয়। বাবা লোকনাথের অন্যতম প্রধান শিষ্য ছিলেন মথুরা মোহন চক্রবর্তী।
“শক্তি ঔষধালয়” -এর প্রতিষ্টাতা। প্রথম জীবনে ঢাকার রোয়াইল গ্রামে; হাইস্কুলের প্রধান
শিক্ষক হিসাবে কাজ করতে করতে আয়ুর্বেদ ঔষধের ব্যবসা শুরু করেন। ঢাকার দয়াগঞ্জে স্বামীবাগ-এ
” শক্তি ঔষধালয়ের” ভিতরে; প্রথম লোকনাথ ব্রহ্মচারীর মন্দির নির্মাণ করেন।
ব্রহ্মানন্দ
ভারতীর মতন আরেক ঢাকার জজকোর্টের উকিল হরিহরণ চক্রবর্তীও; বাবার দর্শন করতে এসে বারদী
থেকে যান। হরিহরণের গুরুভক্তিতে প্রসন্ন হয়ে; বাবা লোকনাথ নিজের ব্যবহৃত পাদুকা দান
করেন। তিনি কাশীতে বাবা লোকনাথের নামে মন্দির প্রতিষ্টা করেন।
সোনারগাঁর
গোবিন্দপুর নিবাসী অখিলচন্দ্র সেন; উচ্ছৃখল জীবনযাপনে অভ্যস্ত এক জমিদার পুত্র। দূর-দূরান্ত
থেকে হাজার হাজার মানুষ কেন নিঃস্ব এক শ্মশানে থাকা মানুষের কাছে আসেন; তা জানার জন্য
তিনি দেখতে আসেন। দূর থেকে দাড়িয়ে প্রায় মাঝে মাঝে এসে দেখে যান।
একদিন
বাবার কাছাকাছি এসে নিজের অশান্তির কথা জানান। নিজের কারনে যেসব মানুষকে কষ্ট দিয়েছে;
তাদের সে কষ্টের মোচন করার উপদেশ দেন লোকনাথ বাবা। অখিলচন্দ্র বাড়ি ফিরে গিয়ে; সব
সম্পত্তি গ্রামের দুঃখী মানুষের নামে দান করে দেন; এবং নিঃস্ব এক কাপড়ে বাবা লোকনাথের
আশ্রমে এসে উপস্থিত হন। বাবার আশীর্বাদে ও সাধনায় তিনি; “সুরথনাথ ব্রহ্মচারী” নামে
খ্যাতি লাভ করেন।
বারদী
নিবাসী কবিরাজ রামরতন চক্রবর্তীর ছেলে জানকীনাথ। যৌবনে দূরারোগ্য রোগে আক্রান্ত হন
। পিতা সন্তানকে আর বাঁচানোর আশা না দেখে; বাবা লোকনাথের আশ্রমে ছেলেকে দান করে যান।
বাবা জানকীনাথকে বারদী আশ্রমের দেখাশুনার দায়িত্ব প্রদান করেন। গুরুকৃপায় জানকীনাথ
ব্রহ্মচারী এক উচ্চ সাধক হিসাবে প্রতিষ্টিত হন। বাবার নয়নের মনি ছিলেন তিনি, অসম্ভব
স্নেহ করতেন জানকীনাথকে। বাবা লোকনাথের সমাধির পাশেই সমাধিস্থ হন জানকীনাথ ব্রহ্মচারী।
বাবা
লোকনাথের দেহত্যাগের পরে; ভক্তদের মনে বাবার অভাব পূরণের চেষ্টা চালিয়ে যান জানকীনাথ।
কথিত আছে – বাবা দেহত্যাগের আগে; সমস্ত অলোকিক শক্তি জানকীনাথ
বাবা
লোকনাথের মন্ত্রঃ
বাবা লোকনাথের প্রনাম মন্ত্র আপনার সকল বাসনা পূরন করবেঃ
ওঁম যোগীন্দ্রায়
নমস্তুভ্যং ত্যাগীস্বরায় বৈ নমঃ
ভুমানন্দ স্বরূপায় লোকনাথায় নমো নমঃ,
নমামি বারদীচন্দ্রং নন্দন কাননেস্মরং হরিম ।
নমামি ত্রিলোকনাথাং লোকনাথাং কল্পতরুম
ওঁ নমঃ শিবায় শান্তায় কারনত্রয়হেতবে ।
নিবেদয়ামি চাত্মানং গতিস্তং পরমেশ্বরঃ
নমস্তে গুরুরূপায় নমস্তে ত্রীকাল দরশিনে
নমস্তে শিবরূপায় ব্রহ্মাত্মনে নমো নমঃ
জয় বাবা লোকনাথ, জয় মা লোকনাথ,
জয় শিব লোকনাথ, জয় ব্রহ্ম লোকনাথ, জয় গুরু লোকনাথ।
ওম শান্তি, ওম শান্তি, ওম শান্তি, ওম
জয়
বাবা লোকনাথের পূজা পদ্ধতিঃ
বাবা লোকনাথ তার ভক্তদের নির্দেশ দিয়ে গেছেন তার পুজোর কোন তিথি নক্ষত্র
নেই। তার পুজোর কোন আয়োজনের প্রয়োজন নেই। যেকোন সময় তাকে মন প্রান দিয়ে ডাকলেই তিনি
ভক্তের ডাকে সাড়া দেন। তিনি আরো বলে গেছেন যে, সকল সত্ এবং পরোপকারী ভালো মানুষের
মধ্যেই তিনি বাস করেন।
শিবের পুজো সাধারণত সোমবার করা হয়। তাই শিবের ভক্ত হিসাবে লোকনাথ বাবার
পুজোও সোমবার করা হয়। তাছাড়াও লোকনাথ বাবার জন্ম হয়েছিল জন্মাষ্টমীর দিন। তাই সেই
দিনেও লোকনাথ বাবার পুজো করা হয়।
সোমবার করে বাবা লোকনাথের পুজো করা উচিত্। তিনি আরো বলেন যে সব মানুষ
হল ঈশ্বরের সন্তান, সব মানুষকে সমান ভাবে ভালোবাসা উচিত্। তিনি ভক্তদের উপদেশ দিয়েছিলেন
সব সময় সততার সঙ্গে জীবন কাটাতে।
লোকনাথ বাবার প্রধান প্রসাদ হল মিছরি, তিনি সামান্য মিছরিতেই সন্তুষ্ট
হন। তিনি বলেন যে সকলকে মিছরির মত হতে হবে। মিছরি যেমন বাইরে থেকে পাথরের মত কঠিন আর
সেটি খেলে তার স্বাদ হল সুমিষ্ট। তেমনই তিনি মানুষকে উপদেশ দেন বাইরে থেকে কঠিন হয়ে
ভিতর থেকে মিষ্টি স্বভাবের হতে।
তিনি ভক্তদের উদ্দেশ্যে কিছু কথা বলে গেছেন। যেমন তিনি বলেন যে তিনি অনেক
পাহাড় পর্বত ঘুরে অনেক অনেক ধন জমা করেছেন, তা ভোগ করবে সারা বিশ্ব। তিনি বলেন
"রণে বনে জলে জঙ্গলে যেখানে বিপদে পড়বে সেখানে আমাকে স্মরণ কোরো আমি রক্ষা করবো।
আমাকে জানতে চাসনা, বুঝতে চাসনা। শুধু মন দিয়ে আমাকে ডাকবি আর নিজের মনের
কথা জানাবি। তাহলেই তোদের দুঃখ আমি মিটিয়ে দেবো। ধরা না দিলে আমাকে ধরে কার সাধ্য।
আমি নিজে ধরা দিতে চাই তাই ধরা দিই। তোদের দুঃখ দেখেই আমার হৃদয় বিগলিত হয়। আর্দ্র
হয় আমার হৃদয়। এই হৃদয় আমার দয়া।"
বাবা লোকনাথের বানীঃ
১. যাহারা
আমার নিকট আসিয়া আমার আশ্রয় গ্রহণ করে, তাহাদের দুঃখে আমার হৃদয় আদ্র হয়।
এই আদ্রতাই আমার দয়া, ইহাই আমার শক্তি যা তাহাদের উপর
প্রসারিত হয় এবং তাহাদের দুঃখ দূর হয়।
২. সত্যের মতো পবিত্র আর কিছুই নেই।
সত্যই স্বর্গ গমনের একমাত্র সোপানস্বরূপ, সন্দেহ নেই।
৩. অন্ধকার ঘরে থাকিলে, তোকে যদি কেহ জিগ্যেস করে তুই
কে? তুই বলিস ‘আমি’।
আমাকে যদি কেহ জিগ্যেস করে আমিও বলি ‘আমি’।
নামে নামে এত মিত্রতা হয় আর আমিতে আমিতে কী কোনও মিত্রতা
হইতে পারে না?
৪. গর্ব করবি, কিন্তু আহাম্মক হবি না। ক্রোধ করবি,
কিন্তু ক্রোধান্ধ হবি না।
৫. যে ব্যক্তি সকলের সুহৃদ, আর যিনি কায়মনো বাক্যে
সকলের কল্যাণ সাধন করেন তিনিই যথার্থ জ্ঞানী।
৬. অর্থ উপার্জন করা, তা রক্ষা করা আর তা ব্যয় করার
সময় দুঃখ ভোগ করতে হয়। অর্থ সকল অবস্থাতেই মানুষকে কষ্ট দেয়। তাই অর্থ ব্যয় হলে বা
চুরি হলে তার জন্য চিন্তা করে কোনও লাভ নেই।
৭. ইচ্ছায় হোক, অনিচ্ছায় হোক, যে সন্তান মায়ের আদেশ
পালন করে ভগবান তার মঙ্গল করেন।
৮. যে ব্যক্তি কৃতজ্ঞ, ধার্মিক, সত্যাচারী, উদারচিত্ত,
ভক্তিপরায়ন, জিতেন্দ্রিয়, মর্যাদা রক্ষা করতে জানে, আর কখনও আপন সন্তানকে পরিত্যাগ
করে না, এমন ব্যক্তির সঙ্গেই বন্ধুত্ব করবি।
৯. দীন, দরিদ্র, অসহায় মানুষের হাতে যখন যা দিবি তা
আমিই পাব, আমি গ্রহণ করব। দারিদ্রতায় ভরা সমাজের দুঃখ দূর করার জন্য সর্বদা চেষ্টা
করবি।
১০. ওরে, সে জগতের কথা মুখে বলা যায় না, বলতে গেলেই
কম পড়ে যায়। বোবা যেমন মিষ্টির স্বাদ বলতে পারে না, সে রকম আর কি!
১১. আমিও তোদের মতোই খাই-দাই, মল-মূত্র ত্যাগ করি।
আমাকে তোদের মতোই একজন ভেবে নিস। আমাকে তোরা শরীর ভেবে ভেবেই সব মাটি করলি। আমি যে
কে, তা আর কাকে বোঝাবো, সবাই তো তার ছোট ছোট চাওয়া নিয়েই ভুলে রয়েছে আমার প্রকৃত আমি
কে।
১২. অন্ধ সমাজ চোখ থাকতেও অন্ধের মতো চলছে।
১৩. রণে, বনে, জঙ্গলে যখনই বিপদে পড়বি, আমাকে স্মরণ
করবি, আমিই রক্ষা করবো।
১৪. এই বিরাট সৃষ্টির মধ্যে এমন কিছু নেই যাকে উপেক্ষা
করা চলে বা ছোট ভাবা যায়। প্রতিটি সৃষ্টি বস্তু বা প্রাণী নিজ নিজ স্থলে স্বমহিমায়
মহিমান্বিত হয়ে আছে জানবি।
১৫. যা মনে আসে তাই করবি, কিন্তু বিচার করবি।
১৬. সচেতন হতে হবে। অচেতনাই জীবনের ধর্ম হয়ে দাঁড়িয়েছে।
নিরন্তর অভ্যাস এবং চেষ্টার ফলে তাকে সচেতনতায় রূপান্তরিত করতে হবে।
১৭. কাম, ক্রোধ সব রিপুই অবচেতন মনের স্তরে স্তরে সুপ্ত
অবস্থায় রয়েছে। সুযোগ পেলেই তারা প্রকাশ হয়, কারণ মানুষ তাদের অস্তিত্ব সম্বন্ধে সচেতন
হয়। অচেতন মন রিপুদের অবাধ ক্রীড়াক্ষেত্র।
১৮. মন যা বলে শোন, কিন্তু আত্মবিচার ছেড়ো না। কারণ
মনে মতো প্রতারক আর কেউ নেই। মহাপুরুষদের বাক্য, শাস্ত্র বাক্যে শ্রদ্ধাবান না-হলে
প্রকৃত আত্মবিচার সম্ভব নয়।
১৯. বিদ্যা, তপস্যা, ইন্দ্রিয় সংযম ও লোক পরিত্যাগ
ছাড়া কেউই শান্তি লাভ করতে পারে না।
২০. অহং চলে গেলে নিজের মনই নিজের গুরু হয়, সৎ ও অসৎ
বিচার আসে। জ্ঞানের সঙ্গে ভক্তির মণিকাঞ্চন যোগ হলে শ্রদ্ধা হবে তোদের আশ্রয়, শ্রদ্ধা
হবে তোদের বান্ধব এবং শ্রদ্ধাই হবে তোদের পাথেয়।
রাখের উপবাস
কি ? রাখের উপবাস কেনো করা হয় ?
রাখের উপবাস কি ? রাখের উপবাস কেনো রাখা হয় ? বা কার্তিক
ব্রত কি ? রাখের উপবাসের ফলঃ
সূর্য যত পশ্চিমে হেলে ততই
বাড়তে থাকে ভিড়। কলাপাতা, ফুল, ধান-দূর্বা, মাটির প্রদীপ, ঘি, ডাব ও দুধ ইত্যাদি নিয়ে
বসে মেয়েরা । দুধ ঢেলে, আগরবাতি জ্বালিয়ে উৎসবের সূচনা করে নারীরা । বাড়ি থেকে আনা
ফলমূল কিছুক্ষণের জন্য রাখা হয় বাবা লোকনাথের মূর্তির সামনে। তারপর সেগুলো নিয়ে মন্দিরের
সামনে সারিবদ্ধভাবে বসে যায় সবাই। সামনে কলাপাতার ওপর রাখা হয় ঘিয়ের প্রদীপ। বিপদ
থেকে রক্ষার জন্য যে কয়জন আপনজনের উদ্দেশ্যে প্রার্থনা করা হয়, গুনে গুনে সেই ক'টি
প্রদীপই রাখা হয়। দুই-চার-দশ-বিশটা পর্যন্ত প্রদীপ দেখা যায়। চারপাশে সাজানো থাকে
নানা রঙের কাটা ফল। সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গে বেজে ওঠে ঘণ্টা। উলুধ্বনির মধ্য দিয়ে
সবাই একযোগে জ্বালাতে শুরু করে প্রদীপ। একসঙ্গে জ্বলে ওঠে শত শত প্রদীপ। প্রদীপ জ্বালানো
শেষে ভাঙা হয় সারাদিনের উপবাস। আপনজনের কল্যাণ কামনা করে এই উপবাস করে বাবা লোকনাথ
ভক্তরা। কলেরা-বসন্তের হাত থেকে বাঁচার জন্য কার্তিক মাসে উপবাস পালন এবং আশ্রম প্রাঙ্গণে
ঘিয়ের প্রদীপ ও ধূপ-ধুনা জ্বালানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন বাবা লোকনাথ। 'রাখের উপবাস'
নামে পরিচিত এই অনুষ্ঠানকে কেউ কেউ 'কার্তিক ব্রত'ও বলে থাকে।
১৫ থেকে ৩০ কার্তিক এই ১৫
দিনের প্রতিটি শনি ও মঙ্গলবার এই ব্রত অনুষ্ঠান হয়ে থাকে।
বাবা লোকনাথের শতনামঃ
তাহলে কার কি চাওয়া কমেন্ট
সেকশনে লিখে যান/ বা কোন কৃতজ্ঞতা জানাতে চাইলেও লিখতে পারেন কমেন্ট সেকশনে